জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এলজিইডির প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোটভাই ও পৌর কাউন্সিলর মো. নাসির শেখের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ার ঘোষেরঘাট ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকালে কাউন্সিলর মো. নাসির শেখ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে ব্যাপাক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে একটি আবেদন করেন।
এদিকে প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় গোপালগঞ্জে এলজিইডি’র প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে টুঙ্গিপাড়ায় এলজিইডির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে চলমান সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুকুজ্জামান মিয়া বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আমি ‘সিঙ্গিপাড়া – পাটগাতী ’ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজের তদারকির দায়িত্ব পালন করছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখের ছোট ভাই ও টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাসির শেখ লোকজন নিয়ে কাজের সাইটে আসেন।
এরপর তিনি ওই কাজের মান ও প্রাইম কোডের কাজ ঠিক মতো করা হইনি বলে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল করেন। এসময় সিডিউল মোতাবেক কাজটি করা হচ্ছে বলে আমি তাকে জানাই। এতে তিনি আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায় আমার বাবা-মা তুলে তিনি গালাগাল করেন। আমি তাকে এসব না করতে অনুরোধ করলে তিনি আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমি কাজ বন্ধ করে দেই এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।
টুঙ্গিপাড়ার উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। ওই কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এনিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। সমাধান হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।
গোপালগঞ্জের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো, এহসানুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আমরা অফিসিয়ালি বসে আলোচনা করবো। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাসির শেখ প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিতের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কাজের মান নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেছি। এতে তিনি আমাকে ভালো কোনো জবাব দেননি। এতে আমি উত্তেজিত হয়ে তার সঙ্গে কথা বলি। এর বেশি কিছু নয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমদাদুর হক বিশ্বাস অ্যান্ড অনামিকা ট্রেডার্স (জে ভি) এর সত্ত্বাধিকারী এমদাদুর হক বিশ্বাস বলেন, ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এলজিইডির ঊর্ধ্বতন অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কাজের তদরকি করছেন এবং কাজ বুঝে নিচ্ছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলার সব উন্নয়ন কাজ তারাই করতে চায়। এই কাজটিও তারা করতে চেয়েছিলেন। কাজ না পেয়ে ভাইয়ের ক্ষমতা দেখিয়ে মো. নাসির শেখ দায়িত্ব পালনরত প্রকৌশলীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ আমাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।
উল্লেখ্য, এ বছরের জানুয়ারি মাসে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় ‘সিঙ্গিপাড়া-পাটগাতী ’ পর্যন্ত ২.৬ কি.মি, সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি শুরু করে। ইতোমধ্যে কাজটির প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে।